Monday, 26 December 2016

কাননদেবীরে বুঝি নাই সুচিত্রা সেনরে বুঝি নাই

বহুকিছু বুঝিনাই, বহু লেখাজোখা, বহু আঁকজোঁক, নক্ষত্ররাজি
আমার গ্রন্হ যাহাঁরা হস্তে লন নাই, তাহাঁরাও
আমাকে পছন্দ কখনও করেন নাই এমনও দেখিয়াছি
আমিও চাহি নাই তাহাঁদের পছন্দের তালিকায় আমার
কুনামখানি ঘাপটি মারিয়া থাকে, তাহাঁদের রোগগ্রস্ত করে--
জিজ্ঞাসা করিবার মতো কেহ নাই, কে-ই বা বলিয়া দিবে
সাতাশ নক্ষত্র হতে কী কারণে একটি নক্ষত্রের নাম বাছিলেন
সেইটি চব্বিশতম, নক্ষত্রগণের ক্রীড়া কভূ বুঝি নাই
কাননদেবীরে বুঝি নাই সুচিত্রা সেনরে বুঝি নাই
অহো, সে কি নক্ষত্রের আলো, তাহাঁদের বায়োস্কোপের 
গবাক্ষগুলিতে তাহাঁদের আলো দেখিবার জনছ জনসমুদায়
কাড়াকাড়ি মারামারি করিতেছে, ক্রমে বৃদ্ধাবৃদ্ধ তাহাঁদের পক্ককেশে
শেষ আলো কোথায় হারায়ে গেছে, তাহাঁরা কেহ কভূ 
জানিতে পারেন নাই ; অহো, কেমনে একটি রকেট চাঁদে যায়
ফিরিয়া চলিয়া আসে পুনরায় ! কেহ কেহ রকেট বিজ্ঞানাশ্রিত কবিতায়
চুপিসাড়ে কোয়ান্টাম বাস্তবের ফাঁদখানি পাতিয়া অপেক্ষা করেন--
যেমন বিষ্ণু দে, তাহাঁর পংক্তিগুলি রকেটগণিতে কেন যে আক্রান্ত
বুঝি নাই ; আমি যোগেন চৌধুরী বুঝিয়াছি, গাইতোণ্ডে বুঝি নাই--
কুড়ি কোটি টঙ্কায় তাহাঁর তৈলচিত্র বৈভবশালীগণ ক্রয়ের গৌরবে
নিজনিজ নাম টঙ্কাক্ষরে লিপিবদ্ধ করিবার ক্রীড়ায় মাতেন--
অহো, অহো, আমি অলোকরঞ্জন বুঝিয়াছি, আলোক সরকার বুঝি নাই--
তিন দিনে এক পংক্তি লিখিবার পর, আরেক পংক্তি আঠাহীন
নিম্নের সিঁড়ির ধাপে স্হান লয় ; প্রথম পংক্তির ন্যায় সেটিও কবিতা--
বুঝি নাই প্রতিটি পংক্তি যদি কবিতার রূপ লয়
যেন বা কঙ্গনা রানৌতের কটিদেশ, আলিয়া ভাটের বেবি ঠোঁটের ফুলেল
তাহারা কি বিচ্ছিন্ন সমাপতনের অষ্টমগর্ভের সন্তান !
অমিয় চক্রবর্তীর কুহকবিহীন নিরাসক্ত হাহাকারহীন স্বপ্নহীন ঢঙে
অনুসরণের পথে দেখি আলোক সরকার ; ছোটোলোকপাড়ার যুবা আমি
সদ্য দাড়ি গজাইবার আনন্দে হাত বুলাই, অচিন্ত্যনীয় চিন্তা করি--
"উতল নির্জন" হইলা কেমনে ! "নির্জন" তো জীবনানন্দীয়
যাহাঁর কবিতার বিপুল ঝঞ্ঝা কৃষ্ণচশমায় করিয়াছিলেন রুদ্ধ ?
"আমার তো জানা নেই সহসা এ রঙ্গের প্রণয়" -- বুঝি নাই আমি--
"আমাকে তা দেওয়া কেন যা আমার নয়" -- বুঝি নাই আমি--
বিদেশি ইংরাজগণ লইয়া আসিয়াছিল তাই, ফরাসি কবিতা বাংলায়
মধ্যবিত্ত বাঙালির আধুনিকতাবাদী ধুম্রজালে আলোক সরকার
পংক্তি ধরিবার জন্য অন্যদিগের হতে কী করিয়া দূরত্ব গড়িয়া তোলা যায়
তাহা প্রতিটি পংক্তির জন্য নিবেশ করিয়াছেন চিত্রের অনৈক্যের খাতে
বয়সের সাথে-সাথে পংক্তিসমূহ পারস্পরিক জুয়া খেলিয়াছে
আধুনিকতাবাদী মহাআধুনিক কবি মহাশয় গবাক্ষটি মালার্মের ছিল --
অথবা শপ্তদশ শতকের ঝঁ লা ফনতা, উনিশ শতকে আলফঁসে দ্য লামার্তিন;
কেন কেহ আপনাকে ডাডাবাদী রাইজোম্যাটিক বলিবে না ?
পংক্তির পরের পংক্তির মাঝে আঠা নাই ? রজঃ বা বীর্যের আঠা ?
কখনো বা ঠাটা গদ্যে স্বগতসংলাপ কবির নামের ওজনে উঠে যায় ;
অতিসংহতির কূপে ইহাও কি "নিরাশাকরোজ্জ্বল চেতনার" ঢেউ নহে ?
আলোক-অলোক-দীপংকরের কন্ঠ শুনিয়াছি বালিগঞ্জের ধনীগৃহে
শুনিয়াছি ঢেউগুলি স্ব-স্ব দেহে সাবান মাখিবার পর ফেনাক্রীড়া করে--
বাক্যগুলি অবজেকটিভ প্রতিস্ব লয়ে যাত্রা করে এবং সাবজেকটিভিটি
কাঁধের উপরে লয় "আলোকিত সমন্বয়" ; উহা কি প্রকৃতই সমন্বয় ছিল ?
তাহাঁদের বঙ্গীয় চাহনিতে কলিকাতা নাই কেন ? বাস্তব কলিকাতা ?
ঘরের বাহিরে চাহিয়া দ্যাখেন নাই আপুনি ও আপনারা--
নিজ গৃহকোণকেই ঐতিহ্যপীড়িত "বিশুদ্ধ অরণ্য" রূপে মস্তিষ্কের কোষে
বোদল্যারি "শাণিত বিষাদ" নিপুণ বিস্ময়ী বিলাসিতা পায়, অথচ শহর নাই
দেহের ভিতরে "দুই পাশে সবুজ ঘাসের স্বাভাবিক", রিয়্যালি ? স্বাভাবিক ?
"কোনো পদচিহ্ণ নাই" ; আমরা যাহারা ছোটোলোক, দেখিতেছি
অজস্র মানুষ, হাজার লক্ষ পদচিহ্ণ প্রতিদিন, প্রতিটি মুহূর্তে, কোথায় হারায়ে যায়
এইসব মানুষের কোনোরূপ "আশ্রয়ের বহির্গৃহ" নাই; আপুনার আছে,
আপুনাদিগের, আলোক-অলোক-দীপঙ্কর মহাশয়দের

Friday, 25 November 2016

ইন্দ্রাণী মুখোপা৭ধ্যায়-এর জন্য প্রেমের কবিতা

অসহ্য সুন্দরী, আমার নিজের আলো ছিল না
তোর আলো চুরি করে অন্ধকারে তোরই ছায়া হয়ে থাকি
তোর আর তোর বরের মাঝখানে শ্বাসের ইনফ্যাচুয়েশানে
অসহ্য সুন্দরী, বেহালার কোন তারে তোর জ্বর, তা জানিস ?
জানি না কেমন করে রেমব্রাঁর তুলি থেকে পিকাসোর তুলিতে চলে গেলি
তোর মাতৃতান্ত্রিক ইতিহাসের চেতনায়
তিনশো বছর পড়ে আছি সমুদ্রের গভীরতম জলে ভাঙা জাহাজে শেকলবাঁধা
সময়কালকে যে স্বরলিপিতে বেঁধে ফেলিস তা বলেছিস তোর বরকে ?
বলেছিস পরস্ত্রীকাতরতার প্রেমিককে মগজে চাকর করে রেখেছিস ?
সাঁতারু যেমন জলে সহজ তেমন তুই সময়কালে
অসহ্য সুন্দরী, আমাকে গড়ে নিয়েছিস ভয় যন্ত্রণা আনন্দের মিশেলে--
মনে রাখি যে ব্যথা আর দুঃখই আগুন, হে অসহ্য সুন্দরী
তোর আর তোর বরের মাঝে পরস্ত্রীকাতরতার শ্বাস 
শুনতে পাচ্ছিস ? শোন, কান পেতে শোন...
 

Saturday, 19 November 2016

সোনালী মিত্র'র জন্য প্রেমের কবিতা

পুরাণের সংস্কৃত পাতা থেকে নেমে এসে তুইই শিখিয়েছিলিস
কবির লেখকের গণ্ডারের চামড়া খুলে রাস্তার ভিড়েতে মিশে যেতে
তার আগে নিজেকে বড়ো উন্নাসিক ভেবে কাদার সুপারম্যান
হাতঘড়ির কলকব্জায় ঝড়েতে মেটাফরগুলো চালুনিতে চেলে
ভেবেছি পিস্তল পাশে নেই বলে আত্মহত্যা করিনি একনও
দিল্লির নিম্নচাপে চোখ এঁকে ফিরিয়েছিলিস শব্দ ভিজুয়াল
তরোয়ালে আইনি ঝলকে লিপস্টিকে ছাপা অটোগ্রাফ
প্রতিটি বিপ্লবের দাম হয় বদলের বাজারও তো বসে
জুলিয়াস সিজারের গম্ভীর শেক্ষপিয়ারি সাহিত্যের গমগমা ছেড়ে
সাধারণ মানুষের মতো প্রেমিক চাউনি মেলি তোর কথা মেনে
বুড়ো বলে সক্রেটিস সাজবার সত্যিই দরকার ছিল নাকি
গ্রিসের গাধার ওপরে বসে আথেন্স বা কলকাতার পচাগ্যাঞ্জামে
ধুতি পরে ? কাঁধে উত্তরীয় ! সাহিত্য সভায় ? নাকের বক্তিমে ঝেড়ে !
ভুলে যায় লোকে । মজার এ মরে যাওয়া । গন ফট । খাল্লাস ।
সোনালী প্রেমিকা ! তুইই বুঝিয়েছিলিস : হুদোহুদো বই লিখে
বিদ্বানের নাকফোলা সাজপোশাক খুলে দেখাও তো দিকি
কালো জিভ কালো শ্লেষ্মা কালো বীর্য কালো হাততালি
উলঙ্গ নাচো তো দেখি তাণ্ডবের আঙ্গিকবর্জিত তালে তালে
চুমুর পুনঃচুমু পুনঃপুনঃচুমু দিল্লির নিম্নচাপ মেঘে

এ দ্যাখ গণ্ডারের শিব-সত্য-সুন্দরের চামড়া ফেলে দিয়ে
আজকে পেয়েছি নখে প্রেমিকার চুলের জীবাশ্ম !

Thursday, 17 November 2016

সোনালী চক্রবর্তীর জন্য প্রেমের কবিতা

ব্যথা জখমকে ভালোবাসে -- মাংসকে ভালোবাসে ব্যথা--
সাধু হয়ে গেছি তো, নিভিয়ার মাস্ক পাউডার ছাই
বাড়িতে ল্যাংটো ঘুরে বেড়াই -- পোড়ানো পাণ্ডুলিপির গন্ধ মেখে --
ভালোবাসাকে ভালোবাসি -- অপ্রত্যাশিত সাক্ষাৎ --
সুরের নোনতা খসড়া বাঁধি -- স্মৃতি দাও -- স্মৃতি দাও--
উজবুক তাকাই ঈশ্বরীর ডিজিটাল অনুপস্হিতির ফ্রেমে
নিকেলিত পূর্ণিমা, বেচারী ঈশ্বরী কেন আতো সুন্দরী ?
অবচেতনার খলিফার ফতোয়া -- আস্তিক হয়ে যা শিগ্গিরি --
হায় -- ঈশ্বরী তো নিজেই নাস্তিক --
বোকা নাকি -- সোনার হরিণ কেই বা চায় ?
লাভার ফুটন্ত বিছানায় -- খদিরচুল রূপসী -- নিঃসঙ্গতা আর বঞ্চনা --
আব্রাহামের তিন ছেলের রক্ত আমার গায়ে কেন ?
আমি তো ল্যাংটো খলিফা, নিভিয়ার মাস্ক পাউডার ছাই --
পঞ্চবটির হাইপাররিয়াল জঙ্গল তোকে ঘিরে--
ভবঘুরে -- কুঁজোশঠ -- নুলো -- টোটোবেকার -- খোচর --
নাঙবুড়ো -- লোফার -- নেশুড়ে -- মিথ্যুক -- জুয়াড়ি -- বেয়াদপ --
রাজনর্তক -- জ্যোতিষী তোর বাঁহাত কখন থেকে ধরে রেখেছে --
তুই তো এই শহর -- রাজপথ -- রাস্তা -- লেন -- বাইলেন --
শেষই হতে চাস না শেষই হতে চাস না শেষই হতে চাস না
ব্যথায় ঢালাই নিজেরই গড়া আদল -- সেই যুবক তো ? চিনি আমি !
সে তোর মাংসে ব্যথার মতন আঁকড়ে থাকেনি -- যেমন আমি !
যখন সময় আসবে -- গায়ের সমস্ত পালক -- মখমল -- স্টিলেটো --
ভুরু কোঁচকানো জাদু -- তোর হাতে বটল ওপনার কেন ?
আমি তো সাধু হয়ে গেছি, নিভিয়ার মাস্ক পাউডার ছাই --
বাড়িতে ল্যাংটো ঘুরে বেড়াই -- প্রতিবেশিনীদের প্রিয় উন্মাদ --
সত্যের দপদপানিতে ঘায়েল -- চোখ বুজি -- একদিন তো সব যাবেই --
এখন নয় কেন ? খদিরচুল রূপসী ? তুই চাস নাকি সোনার হরিণ ?
বিশ্বাস করিসনি -- ভয় পাসনি -- যা হয়নি তা তোর নাগালে -- চেষ্টা ছাড়িসনি
ব্যথা মাংসকে ভালোবাসে -- আঘাতকে ভালোবাসে ব্যথা --

Wednesday, 16 November 2016

উপমা অগাস্টিন খেয়ার জন্য প্রেমের কবিতা

আমাদের দুজনের মাঝে একটা চুলের কাঁটাতারের সীমান্ত
একটা চুলের কাঁটাতারের ওই দিকে তিরিশ মিনিট আগে শুকতারা ওঠে
উপমাকে পেতে আমার সারা জীবন লেগে গেল, জানি পাবো না
পুরুষদের কাটা মাথার আবর্জনায় আমার মাথা তুই চিনতে পারিসনি
কবিতারা কেন যে উপমাকে বাদ দিতে গিয়ে শকুন কলোনিতে ঢোকে
আকাশে পাক ধরেছে, দেখতে পায় না
প্রেমের ময়াল প্যাঁচ, ভালোবাসা আমার পেশা
আগুনে পোড়ানো ছায়া পাঠিয়ে দেবো চুলের কাঁটাতারের ওই পারে
ঝিঁঝিপোকাদের কোরাস ভেবে তুই এড়িয়ে যাবি
অথচ আমিই তো সেইন্ট অগাস্টিন, ভালোবাসা আমার পেশা
মগজের ভেতরে তোর কন্ঠস্বর দিয়ে ফাঁদপাতা মাকড়সার জাল
বর্ষার ফোঁসফোঁসানি মেশানো তোর হাঁ-মুখের ইলশেগুঁড়ি
ঘুমোতে ঘুমোতে এক রাতে নিজের চামড়া খুলে পৌঁছে যাবো
দেখবো খেয়ার ঠোঁট বিদেশ চোখ বিদেশ থুতনি বিদেশ চুল বিদেশ
হাত বিদেশ নাভি বিদেশ বুক বিদেশ আলিঙ্গনও বিদেশ
গোলাপি পূর্ণিমার বিছানায় জন্মেছিলিস
তোর আব্বু আমায় আফ্রিকার মানুষ মনে করেছিলেন
কেননা তোর দিকে চাইলেই আমার দুই কাঁধ নেচে ওঠে
অথচ আমি সেইন্ট অগাস্টিন, ভালোবাসা আমার পেশা 

Tuesday, 15 November 2016

অনামিকা বন্দ্যোপাধ্যায়-এর জন্য প্রেমের কবিতা

মনে থাকে যেন, রাজি হয়েছিস তুই, হাত ধরে নিয়ে যাবি নরকের খাদে
রাবণের, কর্ণের, ভীষ্মের, দুর্যোধনের আর আমার জ্যান্ত করোটি

হাজার বছর ধরে পুড়ছে অক্ষরে, বাক্যে, ব্যকরণে, বিদ্যার ঘৃণায়
মনে থাকে যেন, শর্ত দিয়েছিস, আমার সবকটা কালোচুল বেছে দিবি

তিন বুকের আধা-বিদেশিনি, দুইটি বাঙালি বুক, একটি রেডিন্ডিয়ান
সফেদ বৃন্ত দুটো পুরুষের নামে কেন ? প্ল্যাটো ও সক্রেটিস ? বল অ্যানা

অ্যানা দি র‌্যাভেন কাক, ঠোঁটে রক্ত, উসিমুসি বুক, তৃতীয় কি টেকুমেশ চিফ?
যিনি বলেছেন, কোয়াও বোচি-ওয়ে আউ কি ( এই সুন্দর পৃথিবী )

বুৎ ওয়া তে ওয়া ( হায় ) ওয়াও-কোয়ন-অগ ( স্বর্গ )
সব কিছু নষ্ট করে দিচ্ছে এই শাদা লোকগুলো

ওদের জীবনে কোনো প্রেম নেই, শুধু হিংসা, হত্যা, লোভ
অ্যানা, হাত ধরে নিয়ে চল রেডিন্ডিয়ান প্রেমিকের 

তাঁবুর সুগন্ধে, মনে থাকে যেন, রাজি হয়েছিস তুই, উসিমুসি বুক
সবকটা কালো চুল বেছে দিবি, কোলে মাথা নিয়ে, অ্যানা, অনামিকা

আবার তোর সঙ্গে কবে দেখা হবে, ক্যামেরা মুখের কাছে এনে
তোর হাঁ-মুখের দেখাবি চটুল বিশ্বরূপ, অ্যানা, অনামিকা

বদনাম হবার জন্য তৈরি হ, চল তোকে কুখ্যাত কুসঙ্গে নিয়ে যাই
তোর স্বর্গে ছাটাই খানিক এই প্রেমিকের নারকীয় করোটির ছাই

কৃতি ঘোষ-এর জন্য প্রেমের কবিতা

এই সেই গালফোলা যুবতী
যাকে তার বাবা ডাকে ডাবলিউ
রোদের সঙ্গে ষড় করে যে
আমার ছায়াকে ভাঙেচোরে সে
সিগ্রেট ফোঁকে বলে চুমু ওর
খাওয়া এক বাসি-কার্ড এটিএম
পিন ওর দুই চোখে মিচকায়
ইস্তিরি-করা মোর ভজনা
আমি ছিনু সতেরোশো শতকে
ও রয়েছে বাইশের কোঠাতে
যা নিয়েছি তা ফেরত দেয়া যাবে না
উকুনের সাথে চুলে পুষেছি
মৎস্যবালিকা যার বুকে আঁশ
ও আমার পিন-আপ পোস্টার
নদী ওর ঘাম ছাড়া বয় না
প্রেমিকেরা কারাগারে বন্ধ
ফোলাগাল ছুঁই ফেসবুকে রোজ
চুমুখাই সিগ্রেটি ঠোঁটে ওর
আমার কান দুটো কুমিরের
গিটার বাজিয়ে ডাকে আয় আয়
ও আমায় নিলামেতে কিনেছে
একটাকা পঁয়ত্রিশ পয়সায়
চেন বেঁধে পথেঘাটে নিয়ে ঘোরে
তবু বলে তুতুতুতু আয় আয়
তুতুতুতু আয় আয়
তুতুতুতু আয় আয় আয় আয়

Wednesday, 5 October 2016

নেভো মোম নেভো

আপনি আমার প্রিয় নারী, যদিও শুধুই শুনেছি ঘুমন্ত কন্ঠের কালো
ফিল্মে দেখেছি, আগুন-নগ্নিকা, বুক দুটো অতো ছোটো কেন
দুঃখ হয় না কি ? আপনার মুখ দেখে মনে হচ্ছিল বুক ছোটো বলে
হত্যা করতে গিয়ে কিছুটা ঝুঁকলেন, নয়তো বুক উঁচু করে বলতেন
যা করি তা করি, প্রেত তোর তাতে কি, তুই কি ঘুমের ইন্দ্রজালে
শুধু বুক খুঁজে বেড়াস নাকি ! সত্যই তাই, আপনার ঘুমে ঢুকে
তাছাড়া কি খুঁজবো বলুন, ফেরার ট্যাক্সিভাড়া ? গ্যাসের রসিদ ?
যা ইচ্ছে করুন আপনি, জেনে নেবো, চলন্ত গাছেরা বলে দেবে,
না জানলেও আকাশ তো ভেঙে পড়ছে না, আপনি আমার প্রিয় নারী
মন খারাপ করে দিলেন আজকে বৃষ্টির দিনে, ছাতাও আনিনি
আপনার পাশ দিয়ে যেতে যেতে ছাতার আড়াল থেকে আপনার
ছোট্টো দুটো বুক জরিপ করে নিতে পারি, ব্র্যাঙ্কোর প্রেত আমি
ছোরা দুটো নিলেন দুহাতে তুলে, মনে হয়েছিল, বুকের গরবিনী, হত্যা
নেহাতই অজুহাত, কেউ তো আর মনে রাখবে না, উনিও জানেন
তোমাকে দেখেই চুমু খেতে ইচ্ছে করেচিল, না না, হাঁ-মুখের ঠোঁটে নয়
পাছার দু-ঠোঁটে, আহা কি মসৃণ হতো রাজরানি হওয়া, যেন ইস্কাপন
নষ্ট করে নেচে উঠছে বিদ্যুতের খ্যাতি, যার অস্তিত্বে আমি বিশ্বাস করি না
খুলে বলি আপনাকে, আমি কিরকমভাবে নারীকে খুঁজি তা বলছি শুনুন
যেমন ঘোড়দৌড়ের জুয়াড়িরা ঘোড়ার রেসবই খুঁটে খুঁটে পড়ে
আমার ভেতরে সেরকমই পোষা আছে অভিজাত কয়েকটা অসুখ
বুঝলেন, যখন প্রথম প্রেমে পড়ে গিসলুম নগ্ন আপনার !
লেডি ম্যাকবেথ ! আহা কি শঙ্খিনী নারী, কি ডাগর রক্তময়ী চোখ
ঘুমন্ত হেঁটে যাচ্ছ মৃত্যুর মসলিনে সম্পূর্ণ পোশাকহীন, কোনো খেয়াল নেই
চেয়েছি জড়িয়ে ধরতে, বলতে চেয়েছি লেডি, লেডি, নগ্ন পশ্চিমে
একটা চুমু শেষবার দাও, পুরস্কার নিয়ে ডাইনিরা দাঁড়িয়ে রয়েছে
রক্তাক্ত ছোরার সঙ্গে কথা বলো, বুকের নির্দয় ওঠা-নামা, লেডি
ম্যাকবেথ, ওই যিনি ছোটো বুকে মনটা খারাপ করে ফিরছেন বাড়ি
ওনাকে উৎসাহিত করো, বড়ো, আরবের সমস্ত আতর ধুতে পারবে না
হত্যার মিষ্টি গন্ধ, যেমনই লোক হোক, সে তো তার নিজস্ব দৈত্যের সৃষ্টি
তেমন নারৌও, আত্মজীবনীতে লিখবেন কিন্তু প্রথম হস্তমৈথুনের স্বাহা
ক্লিটোরিসে অঙ্গুলিবাজনার মৃদু উগরে তোলা ঝর্ণাঝংকার
আপনার নগ্নতার ব্যক্তিগত ছন্দ লেডিম্যাকবেথের মতো হাঁটছেন
কলকাতার রাস্তা দিয়ে সম্পূর্ণ উলঙ্গ, আমাকে চিনতে পেরেছেন ?
আমি ব্র্যাঙ্কোর প্রেত, প্রতিটি হত্যাদৃশ্যে উপস্হিত থেকে
বুকের বর্তুলতা মাপি, যবে থেকে স্কুলপাঠ্য বইয়ে দুরূহ লেগেছিল
লেডি ম্যাকবেথের লোভ সিংহাসনে রাজমহিষীর মতো উঁচু বুকে
বসে আছো, স্কুল ফেরত সম্পূর্ণ উলঙ্গ তুমি হাঁটছো পাশাপাশি
ঘুমন্তকে নয় ঘুমকে খুন করেছিলে, তুমি চিৎকার করছিলে
'কে জানতো বুড়ো লোকটার গায়ে এতো রক্ত এতো রক্ত ছিল'
এসবই আপনার নারীত্বের রক্ত ছোট্টো দুটো বুকের দুঃখের
ভাববেন না বেশি, যৌবন ফুরোবার সঙ্গে এই দুঃখ চলে যাবে
তখন দেখবেন ক্লিটোরিস সাড়া দিচ্ছে না, রসশাস্ত্রহীন দেহ
আদিরস প্রথমে লোপাট, ঘুমন্ত হাঁটবার আহ্লাদ নামছে দুঃস্বপ্নে
আপনার ছোটো বুক ছোট্টোই থেকে যাবে যতোই উদার হোন
ভিখিরি দেখলেই বটুয়াতে কয়েনের ওজন কমান, লেডি ম্যাকবেথ
ছাড়বে না, উচ্চাশার কি দুর্দশা, হাতে রক্ত, নেভো মোম নেভো
                                   

Friday, 30 September 2016

কমরেড পু-এর আত্মহত্যা -- একটি পোস্টমডার্ন কবিতা

কমরেড পু, ম-১ এর খুড়তুতো বোন, গলায় দড়ি বেঁধে, ঝুলে পড়ল ।
          পুলিশের ডাক্তার ট-১ জানিয়েছিল যুবতীটি মারা গেছেন
রাত ১টা ৪০এ, তাহলে পু ওর আত্মহত্যার কবিতায়, তারিখের তলায়
          কেন সময় লিখেছে ৩টে ৩০ ?
কবিতাটা থানা থেকে পাওয়া যায়নি, ইন্সপেক্টর জ-৩ বললেন,
          সনেটে লেখা আত্মহত্যার চিরকুট ফেরত দেয়া নিষেধ ।
এফ আই আর-এ লেখা ছিল, "চাঁদ ওঠে নাই, বাতাস বহিয়াছিল, শৃগালিনী
          পুংশৃগালকে ডাকিতেছিল, ইহা শরৎকাল, ৩০০ বছরের পুরানো ইঁট,
           বরগার চিড়ের কারণে চড়াইপাখির ডিম পড়িয়া ফাটিয়া গিয়াছে,
          পুংচড়াই নালিশ করিতেছিল, নথিবদ্ধ করা হইয়াছে।"
কমরেড পু, যে ম-১ এর কাকা ন-২ এর মেয়ে, কেন আত্মহত্যা করল
          তা কবিতায় লেখেনি । পু সোভিয়েত রাষ্ট্রে যেতে চায়নি ।
          পু মনে করতো, রুবলহারামিরা নবযুগ আনতে পারবে না,
          নিজের, ছেলেমেয়ের, জ্ঞাতিগুষ্টির নবযুগ আনবে বটে,
          বাড়ি, গাড়ি, নার্সিং হোম, প্রায়ভেট স্কুল খুলে ফেলবে ।
          ম-১কে লিখে বলেছে, "ছোড়দা, ছন্দ ভুল থাকলে শুধরে দিও।"
ম-১তো নিজেই কোনো জন্মে সনেট লেখেনি, মনে-মনে ছকে রেখেছিল,
          কখনও আত্মহত্যা করলে, নাটকের আঙ্গিকে চিরকুট লিখবে,
কেননা ম-১ এর আত্মহত্যা করার বহু কারণ জীবনে ঘটে থাকলেও,
          কাজটা ম-১ মুলতুবি রেখেছে ; ম-১এর জীবনে খলনায়ক
          সংখ্যায় বড়ো বেশি, যেমন স-২, স-৩, স-৪, শ-১, শ-২ ।
কমরেড পু-এর আত্মহত্যার কোনো কারণ ছিল না । এই ব্যাপারটাই
          ভালো লাগে ম-১এর, আত্মহত্যার কারণ না থাকলেও
          আত্মহত্যার ইচ্ছে । পু টাকাহারামিদেরও বিশ্বাস করতে পারেনি ।
          বলত, "ওরা আমাদের আদর্শকে গুয়ের সমুদ্রে চুবিয়ে দেবে।"
ইচ্ছেকে ক্রিয়ায় পালটে ফেলার আহ্লাদটাই কমরেড পু-এর
          আত্মহত্যার কারণ হতে পারে ।
পু যে নিৎশে, কাফকা, ভারতচন্দ্র, ঋত্বিক পড়তো, তা ম-১ জানে'
          'রসমঞ্জরী' পড়ে জানতে চাইতো ও কোন ধরণের যুবতী ।
পু আত্মহত্যা করার পর, বড়োঘরের বরগা, যা থেকে পু ঝুলেছিল,
          ভেঙে পুরোবাড়ি ধ্বসে পড়ল যখন, পু-এর আত্মহত্যা
          গুরুত্ব হারিয়ে, হয়ে গেল বসতবাড়ির আত্মহত্যা ।
ম-১এর ঠাকুমা অ বললেন, "ওই ঘর ছিল অভিশপ্ত, তোদের বংশের অনেক
          লম্পট পুরুষ, বাইজির মদে মেশানো বিষ খেয়ে মরেছে।
তা হত্যা ছিল না আত্মহত্যা না অতিযৌনতার প্রতিদ্বন্দ্বিতা,
          আজও জানা যায়নি।"
ঠাকুমা অ বলে উঠেছিলেন, "ছি ছি 'রসমঞ্জরী' ! কোন মেয়ের চুল নেই
          কোন মেয়ের কম চুল, কোন মেয়ের চুলে চুল ! ওই চুলের
খোঁজেই বংশের পুরুষগুলো মাগিদের কোঁচড়ে মুখ গুঁজে মরল । তোরা
          মাগিদের সঙ্গে র‌্যালা করলে বেপাড়ায় গিয়ে করিস, সেখানকার
          মাগিরা চুল রাখে না বলে শুনিচি।"
ম-১এর দাদা স-১ জানতে চেয়েছিল, এই 'অভিশপ্ত' ব্যাপারটা কী গো?
          ঠাকুমা অ বলেছিলেন, "ওসব আমাদের কালের ব্যাপার,
          বজরা ভাসতো, ঝাড়লন্ঠনের রোশনাই ঝিকমিক, ঘুঙুর,
          চিকের আড়াল, রুপোর রেকাবি, বিলিতি মদ, মুজরো।"
ঠাকুমার পরামর্শে ম-১ আর তার দাদা স-১ যৌবনে অনেক মাগিবাজি 
          করেছিল । তরুণী গবেষকরা তা লিখে রেখেছেন ।
পু তা জানতে পারেনি, ভাগ্যিস । নয়তো এই নিমকলঙ্ককেই ওর
          আত্মহত্যার কারণ বলে শিলমোহর দিতো ।
সেই থেকে চিরকুটহীন আত্মহত্যা ম-১ এর পছন্দ । সনেটের বদলে
          পু ওয়াটারকালার এঁকে যেতে পারতো ।
আত্মহত্যাখানা বাঁধিয়ে রাখতো ম-১এর কাকা ন-২, আর পু-এর নিজের
          দুই বেয়াড়া ভাই জ আর ম-২ ।
আত্মহত্যার কোনো কারণ থাকা উচিত নয় । কেন ক-এর জন্য খ,
          খ-এর জন্য গ, গ-এর জন্য ঘ, ঘ-এর জন্য ঙ, ঙ-এর জন্য
আত্মহত্যা করার কারণের মানে হয় না কোনো । আত্মহত্যা করার
          হলে, উঠে দাঁড়াও, বিষ খাও, সন্ধ্যার নদীতে গিয়ে ডুব দাও,
          আকাশ তোমায় দেখুক এলোচুলে সাগরের দিকে ভেসে যাচ্ছ ।
( 'উত্তরের কবিমন' পত্রিকার সেপ্টেম্বর ২০১৬ সংখ্যায় প্রকাশিত )

রাঙামাসিমার গোপন ডায়রির শেষ পাতা

"ও চেয়েছিল গায়িকা, ঠোঁট দিয়ে, জিভ দিয়ে, গায়িকারা যা করতে পারে
দাঁত কেমনভাবে ব্যবহার করতে হবে, শ্বাসটানা, তখন ফুঁ-প্রেম শুনিনি
স্বরলিপিতেই শ্বাস যাবে-আসবে, খানিক ফিসফিসুনি টাকরা আলজিভে
পুরাণের হিরোদের মতন পাইকারি ভালোবাসা, লোকটা জ্ঞানকুঁজো
কতো বছর যে মায়ের মগজে ঘুমিয়েছিলুম, পাঁচবারের বার জন্মালুম
পালতোলা বাড়ির তিন তলায়, পেটে থাকতে গান প্র্যাকটিস করেছি
ঘর জুড়ে বিকেলের দিকে ছায়াদের অডিশান ছুরিকাটা আলোয়
চাটা-ফাটলের হাঁ-মুখে রক্ত গরম হতে থাকে, দুঃখের কথা বলতে
পাকস্হলীতে গানের শীতঘুমের ঋতুতে কুমিরদের মেটিং মৌসম
ট্রেন ভর্তি মানুষ নামছে বুক চিরে চিরে ঘেমো মেয়েদের গাদাগাদি
ওদের বংশে পারিবারিক জিভের গপ্পো খুব শুনতুম, ও, এই ব্যাপার
যেন নাক ডাকার সময়ে মুখের ভেতরে ফেলা পাঁচ টাকার কয়েন
সিজারিয়ান করে ঝকঝকে অ্যালুমিনিয়াম পাহাড় প্রসব করল
কথা কইবে যেন অন্ধের ছড়ি ফুটপাথের সঙ্গে আলাপম করছে
বাড়িতে অভিধান বলতে ভাশুরপোর দ্বিতীয় পক্ষের বউ
আর আগের পক্ষের মেয়ে হাতের রেখায় যতোটুকু ব্যাকরণ রয়েছে
সিনেমাহলে ফেলে-যাওয়া গাদাগাদি ছোঁড়াছুঁড়িদের বদঘাম
বোতাম সভ্যতা চলছে তখনও জিপসংস্কৃতি বাজারে নামেনি
অমাবস্যার রাতে কাতলা মাছের আঁশে গড়া হাওয়া খাচ্ছিলুম
ও বললে, শরীর একখানা উপমহাদেশ আমার মনে পড়েছে
শীতকালেও গায়ে এমন গ্রীষ্ম ছুঁড়ে মারত মলম লাগাতুম
এদিকে মাঝরাতই শ্বাসে-শ্বাসে বিছানায় অন্ধকার গাঢ় করেছে
ভাগ্যিস শুতে আসার আগে পাকা পেয়ারাখানা খেয়েছিলুম
কী মিষ্টি কী মিষ্টি এই নাহলে ভরাসংসার শ্বশুরবাড়ি..."