Friday, 30 September 2016

কমরেড পু-এর আত্মহত্যা -- একটি পোস্টমডার্ন কবিতা

কমরেড পু, ম-১ এর খুড়তুতো বোন, গলায় দড়ি বেঁধে, ঝুলে পড়ল ।
          পুলিশের ডাক্তার ট-১ জানিয়েছিল যুবতীটি মারা গেছেন
রাত ১টা ৪০এ, তাহলে পু ওর আত্মহত্যার কবিতায়, তারিখের তলায়
          কেন সময় লিখেছে ৩টে ৩০ ?
কবিতাটা থানা থেকে পাওয়া যায়নি, ইন্সপেক্টর জ-৩ বললেন,
          সনেটে লেখা আত্মহত্যার চিরকুট ফেরত দেয়া নিষেধ ।
এফ আই আর-এ লেখা ছিল, "চাঁদ ওঠে নাই, বাতাস বহিয়াছিল, শৃগালিনী
          পুংশৃগালকে ডাকিতেছিল, ইহা শরৎকাল, ৩০০ বছরের পুরানো ইঁট,
           বরগার চিড়ের কারণে চড়াইপাখির ডিম পড়িয়া ফাটিয়া গিয়াছে,
          পুংচড়াই নালিশ করিতেছিল, নথিবদ্ধ করা হইয়াছে।"
কমরেড পু, যে ম-১ এর কাকা ন-২ এর মেয়ে, কেন আত্মহত্যা করল
          তা কবিতায় লেখেনি । পু সোভিয়েত রাষ্ট্রে যেতে চায়নি ।
          পু মনে করতো, রুবলহারামিরা নবযুগ আনতে পারবে না,
          নিজের, ছেলেমেয়ের, জ্ঞাতিগুষ্টির নবযুগ আনবে বটে,
          বাড়ি, গাড়ি, নার্সিং হোম, প্রায়ভেট স্কুল খুলে ফেলবে ।
          ম-১কে লিখে বলেছে, "ছোড়দা, ছন্দ ভুল থাকলে শুধরে দিও।"
ম-১তো নিজেই কোনো জন্মে সনেট লেখেনি, মনে-মনে ছকে রেখেছিল,
          কখনও আত্মহত্যা করলে, নাটকের আঙ্গিকে চিরকুট লিখবে,
কেননা ম-১ এর আত্মহত্যা করার বহু কারণ জীবনে ঘটে থাকলেও,
          কাজটা ম-১ মুলতুবি রেখেছে ; ম-১এর জীবনে খলনায়ক
          সংখ্যায় বড়ো বেশি, যেমন স-২, স-৩, স-৪, শ-১, শ-২ ।
কমরেড পু-এর আত্মহত্যার কোনো কারণ ছিল না । এই ব্যাপারটাই
          ভালো লাগে ম-১এর, আত্মহত্যার কারণ না থাকলেও
          আত্মহত্যার ইচ্ছে । পু টাকাহারামিদেরও বিশ্বাস করতে পারেনি ।
          বলত, "ওরা আমাদের আদর্শকে গুয়ের সমুদ্রে চুবিয়ে দেবে।"
ইচ্ছেকে ক্রিয়ায় পালটে ফেলার আহ্লাদটাই কমরেড পু-এর
          আত্মহত্যার কারণ হতে পারে ।
পু যে নিৎশে, কাফকা, ভারতচন্দ্র, ঋত্বিক পড়তো, তা ম-১ জানে'
          'রসমঞ্জরী' পড়ে জানতে চাইতো ও কোন ধরণের যুবতী ।
পু আত্মহত্যা করার পর, বড়োঘরের বরগা, যা থেকে পু ঝুলেছিল,
          ভেঙে পুরোবাড়ি ধ্বসে পড়ল যখন, পু-এর আত্মহত্যা
          গুরুত্ব হারিয়ে, হয়ে গেল বসতবাড়ির আত্মহত্যা ।
ম-১এর ঠাকুমা অ বললেন, "ওই ঘর ছিল অভিশপ্ত, তোদের বংশের অনেক
          লম্পট পুরুষ, বাইজির মদে মেশানো বিষ খেয়ে মরেছে।
তা হত্যা ছিল না আত্মহত্যা না অতিযৌনতার প্রতিদ্বন্দ্বিতা,
          আজও জানা যায়নি।"
ঠাকুমা অ বলে উঠেছিলেন, "ছি ছি 'রসমঞ্জরী' ! কোন মেয়ের চুল নেই
          কোন মেয়ের কম চুল, কোন মেয়ের চুলে চুল ! ওই চুলের
খোঁজেই বংশের পুরুষগুলো মাগিদের কোঁচড়ে মুখ গুঁজে মরল । তোরা
          মাগিদের সঙ্গে র‌্যালা করলে বেপাড়ায় গিয়ে করিস, সেখানকার
          মাগিরা চুল রাখে না বলে শুনিচি।"
ম-১এর দাদা স-১ জানতে চেয়েছিল, এই 'অভিশপ্ত' ব্যাপারটা কী গো?
          ঠাকুমা অ বলেছিলেন, "ওসব আমাদের কালের ব্যাপার,
          বজরা ভাসতো, ঝাড়লন্ঠনের রোশনাই ঝিকমিক, ঘুঙুর,
          চিকের আড়াল, রুপোর রেকাবি, বিলিতি মদ, মুজরো।"
ঠাকুমার পরামর্শে ম-১ আর তার দাদা স-১ যৌবনে অনেক মাগিবাজি 
          করেছিল । তরুণী গবেষকরা তা লিখে রেখেছেন ।
পু তা জানতে পারেনি, ভাগ্যিস । নয়তো এই নিমকলঙ্ককেই ওর
          আত্মহত্যার কারণ বলে শিলমোহর দিতো ।
সেই থেকে চিরকুটহীন আত্মহত্যা ম-১ এর পছন্দ । সনেটের বদলে
          পু ওয়াটারকালার এঁকে যেতে পারতো ।
আত্মহত্যাখানা বাঁধিয়ে রাখতো ম-১এর কাকা ন-২, আর পু-এর নিজের
          দুই বেয়াড়া ভাই জ আর ম-২ ।
আত্মহত্যার কোনো কারণ থাকা উচিত নয় । কেন ক-এর জন্য খ,
          খ-এর জন্য গ, গ-এর জন্য ঘ, ঘ-এর জন্য ঙ, ঙ-এর জন্য
আত্মহত্যা করার কারণের মানে হয় না কোনো । আত্মহত্যা করার
          হলে, উঠে দাঁড়াও, বিষ খাও, সন্ধ্যার নদীতে গিয়ে ডুব দাও,
          আকাশ তোমায় দেখুক এলোচুলে সাগরের দিকে ভেসে যাচ্ছ ।
( 'উত্তরের কবিমন' পত্রিকার সেপ্টেম্বর ২০১৬ সংখ্যায় প্রকাশিত )

রাঙামাসিমার গোপন ডায়রির শেষ পাতা

"ও চেয়েছিল গায়িকা, ঠোঁট দিয়ে, জিভ দিয়ে, গায়িকারা যা করতে পারে
দাঁত কেমনভাবে ব্যবহার করতে হবে, শ্বাসটানা, তখন ফুঁ-প্রেম শুনিনি
স্বরলিপিতেই শ্বাস যাবে-আসবে, খানিক ফিসফিসুনি টাকরা আলজিভে
পুরাণের হিরোদের মতন পাইকারি ভালোবাসা, লোকটা জ্ঞানকুঁজো
কতো বছর যে মায়ের মগজে ঘুমিয়েছিলুম, পাঁচবারের বার জন্মালুম
পালতোলা বাড়ির তিন তলায়, পেটে থাকতে গান প্র্যাকটিস করেছি
ঘর জুড়ে বিকেলের দিকে ছায়াদের অডিশান ছুরিকাটা আলোয়
চাটা-ফাটলের হাঁ-মুখে রক্ত গরম হতে থাকে, দুঃখের কথা বলতে
পাকস্হলীতে গানের শীতঘুমের ঋতুতে কুমিরদের মেটিং মৌসম
ট্রেন ভর্তি মানুষ নামছে বুক চিরে চিরে ঘেমো মেয়েদের গাদাগাদি
ওদের বংশে পারিবারিক জিভের গপ্পো খুব শুনতুম, ও, এই ব্যাপার
যেন নাক ডাকার সময়ে মুখের ভেতরে ফেলা পাঁচ টাকার কয়েন
সিজারিয়ান করে ঝকঝকে অ্যালুমিনিয়াম পাহাড় প্রসব করল
কথা কইবে যেন অন্ধের ছড়ি ফুটপাথের সঙ্গে আলাপম করছে
বাড়িতে অভিধান বলতে ভাশুরপোর দ্বিতীয় পক্ষের বউ
আর আগের পক্ষের মেয়ে হাতের রেখায় যতোটুকু ব্যাকরণ রয়েছে
সিনেমাহলে ফেলে-যাওয়া গাদাগাদি ছোঁড়াছুঁড়িদের বদঘাম
বোতাম সভ্যতা চলছে তখনও জিপসংস্কৃতি বাজারে নামেনি
অমাবস্যার রাতে কাতলা মাছের আঁশে গড়া হাওয়া খাচ্ছিলুম
ও বললে, শরীর একখানা উপমহাদেশ আমার মনে পড়েছে
শীতকালেও গায়ে এমন গ্রীষ্ম ছুঁড়ে মারত মলম লাগাতুম
এদিকে মাঝরাতই শ্বাসে-শ্বাসে বিছানায় অন্ধকার গাঢ় করেছে
ভাগ্যিস শুতে আসার আগে পাকা পেয়ারাখানা খেয়েছিলুম
কী মিষ্টি কী মিষ্টি এই নাহলে ভরাসংসার শ্বশুরবাড়ি..."