Wednesday, 25 February 2015

রোগের স্প্যাজম

এটা কি লিখেছ তুমি
এ থেকে তো মানে 
অফুরান বেরিয়ে চলেছে
শব্দের ভেতরে মানে
বাক্যের মধ্যে মানে
চিত্রকল্প মানে দিয়ে ঠাশা
এমনকি ছেদ যতি কোলন সেমিকোলন ড্যাশ
সেগুলোতে কুঁদে কুঁদে মানের ম্যাজিক
সম্পূর্ণ লেখাটা পড়ে বোঝা যাচ্ছে
কিছু একটা বলবার চেষ্টা করে গেছো !

কবিতার কোনো মানে বা অর্থ হয়নাকো
কবিতা তো রোগের স্প্যাজম
সমুদ্রের তলা থেকে উঠে আসা জলের
গভীর কান্না
শকুনের লাশ-খোঁজা উড়ালের উদাস বাতাস
ফুলের ভেতরে ঢোকা দুর্গাটুনটুনির ফিকেনীল জিভ
ফসলের মাঠে অস্তগামী সূর্যকে
কাঠবিড়ালির হাঁটুগাড়া চকিত সেলাম

আর তুমি কিনা কবিতার গর্ভে চুপচাপ
ঢেলে দিচ্ছ মানের বিষাক্ত শুক্রবিষ
সে-বিষেতে জন্মাবে যারা 
তারা কি আস্ত রাখবে বাদবাকিদের
ছেয়ে যাবে চারিদিক বিষাক্ত সন্তানে
গ্রামে ও শহরে গঞ্জে গলিতে বাজারে
আর সেটাই তো ঘটে গেছে বঙ্গজীবনে
মানের ওপরে মানে চেপে বসে গেছে
জগদ্দল কালোয়াতি পাহাড়ের দমবন্ধ
গন্ধমাদক

 

Tuesday, 24 February 2015

বৃদ্ধাবাস

আমরা দুজনে হাঙরের পেটে রাত কাটাই
জোঁকশীতে কুঁজো অলস আপ্যায়নে
আমরা দুজনে কুপির তলার ছায়াকে খাই
ফুলুট-বাজানো রবিঠাকুরের গানে
আমরা দুজনে খাবারের প্লেটে চাঁদ জোগাই
বউ-বিরক্ত বুড়িরা সে-কথা জানে
 আমরা দুজনে ভাঙা ধনুকের ছিলা চেবাই
গেছো-লেখকেরা আজও সে-কথা মানে
 আমরা দুজনে ভোটের বোতামে গ্যাস ঢোকাই
গণধড়িবাজ পড়ে থাকে নির্জ্ঞানে
আমরা দুজনে স্মৃতির মাথায় ঝড় চাপাই
আত্মজনেরা তাই পিঠে ছোরা হানে
আমরা দুজনে জোকারি করে হাসাই
পরস্পরের গোপন রোমন্হনে

ছোটোলোকের জন্য ডাস্টবিন

পচা কাগজের ঝুড়িতে পড়তে রেডি
মেড-ইজি পাঠ পড়ার ঘুমের শেষে
দেখুন না কারা ফেলছে টাটকা বডি
গার্ড যারা ছিল আসলে বাউনসার
গোদা ঠ্যাং মেরে তুলেছে আমার লাশে
কুকুরের মুতে স্বীকৃত শহিদ বেদি
ভাষাকে জেহাদে চারিদিক থেকে ঘিরে
মায়াজাল ছাড়া ভালোবাসা যায় বুঝি
বঙ্গাক্ষরে ব্যকরণভেদী বিভীষণ
ঝুড়িতে পড়ব বাজে কাগজের জ্ঞানে
 বিশেষণভোজী ইতিহাস আজ রেডি

কি লজ্জার, না ?

আমি কবিতা লিখি
কি লজ্জার, না ?
আমার বাবা কখনও স্কুলে পড়েননি
কি লজ্জার, না ?
আমার মা কখনও স্কুলে পড়েননি
কি লজ্জার, না ?
আমার ঠাকুরদা বাংলা লিখতে জানতেন না
কি লজ্জার, না ?
আমার ঠাকুমা শুদ্ধ বাংলা বলতে পারতেন না
 কি লজ্জার, না ?
আমার বাবা-মা বিয়েতে কোনো বই উপহার পাননি
কি লজ্জার, না ?
আমার মা কখনও নাটক দেখেননি
কি লজ্জার, না ?
আমার বাবা কোনো উপন্যাস পড়েননি
কি লজ্জার, না ?
আমার মা কোনো ফিল্ম দেখেননি

কি লজ্জার, না ?
আমার বাবা-মা কখনও কোনো গানের অনুষ্ঠানে যাননি
কি লজ্জার, না ?
আমার বাংলা শিক্ষক পূর্ববাংলার বুলি ছাড়তে পারেননি
কি লজ্জার, না ?
আমার ইংরেজি শিক্ষক কখনও ড্যাফোডিল্স ফুল দ্যাখেননি
কি লজ্জার, না ?
আমি কবিতা লিখি
কি লজ্জার, না ?
আমার মাকে যেন প্লিজ বলবেন না ।

ইনসমনিয়া

লেখা পায় । লিখি ।।
খিদে পায় । খাই ।।
প্রেম পায় । করি ।।
জ্বালা পায় । জ্বলি ।।
নেশা পায় । গিলি ।।
হাসি পায় । হাসি ।।
ছোঁয়া পায় । ছুঁই ।।
দেখা পায় । দেখি ।।
রান্না পায় । রাঁধি ।।
দান পায় । থুই ।।
পড়া পায় পড়ি ।।
শোয়া পায় । শুই ।।
হিসি পায় । মুতি ।।
হাই পায় । তুলি ।।
ঘৃণা পায় । করি ।।
হাগা পায় । হাগি ।।
হাঁচি পায় । হাঁচি ।।
ব্যথা পায় । কাঁদি ।।
পাদ পায় । পাদি ।।
নাচ পায় । নাচি ।।
গান পায় গাই ।।
শ্বাস পায় । হই ।।
ঘুম পায় না । 
স্বপ্ন হয় না ।।

আমার ঠাকুমাকে যেন বলবেন না

উনি আমায় পছন্দ করতে বারণ করেছিলেন
আপনি কেন পছন্দ করছেন, নীরা ?
আমি আজও শুঁয়াপোকা-ঠাশা ঈশান-মেঘে  চিৎসাঁতার দিই
উনি পঞ্চাশ বছর আমার কাছে কবিতা চাননি
আপনি কেন চাইছেন, নীরা ?
আমি আজও জলের দশ-পা গভীরে বরফের লাঠি চালাই
উনি আমার সাবজুডিস মামলায় আমার বিরুদ্ধে সম্পাদকীয় লিখেছিলেন
আপনি সম্পাদক হয়ে কেন লেখা চাইছেন, নীরা ?
আমি আজও স্মোকড পেংগুইনের চর্বির পরোটা খাই
উনি আমার কবিতার বইয়ের প্রকাশক হয়েও স্বীকার করেননি
আপনি কেন স্বীকৃতি দিচ্ছেন, নীরা ?
আমি আজও দুপুর গেরস্হের হাঁ-মুখে সেঁদিয়ে ফ্যামিলিপ্যাক হাই তুলি
উনি আমার নাম উচ্চারণ করতে চাইতেন না
আপনি কেন তরুণদের কাছে করছেন, নীরা ?
আমি রক্তঘোলা জলে টাইগার শার্কদের সঙ্গে বলিউডি নাচ নাচি
উনি বলেছিলেন ওর মধ্যে সত্যিকারের কোনো লেখকের ব্যাপার নেই
আপনি কেন মনে করছেন আছে, নীরা ?
আমি ইমলিতলায় জানতুম কাঠকয়লা ছাড়া ইঁদুর পোড়ায় স্বাদ হয় না
উনি বলেছিলেন ওর কোনো ক্রিয়েটিভ দিক নেই
আপনি কেন মনে করছেন আছে, নীরা ?
আমি অন্তত পাঁচ হাজার কোটি টাকার ব্যাঙ্কনোট পুড়িয়ে মড়ার গন্ধ পেতুম
উনি বলেছিলেন ওর দ্বারা কোনোদিন কবিতা লেখা হবে না
আপনি কেন মনে করছেন হয়েছে, নীরা ?
আমি অ্যাম্সটারডামের খালপাড়ে হাঁ-করা বুড়োদের লিরিক শুনেছি
উনি সে-সময়ে দুঃখ থেকে রাগ আর রাগ থেকে বিতৃষ্ণায় উঠেছেন
আপনি এত উদার কেন, নীরা ?
আমার ঠাকুমাকে যেন প্লিজ বলবেন না ।